Voice Chattogram

Voice Chattogram

জাগ্রত বাংলার ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান এর জীবনাবসান

জাগ্রত বাংলার ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান এর জীবনাবসান।

মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘জাগ্রত বাংলা’র স্বনামধন্য ভাস্কর ; ‘সংশপ্তক’, ‘বিজয় কেতন’ ও ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’-এর স্রষ্টা শিল্পী হামিদুজ্জামান খান সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মৃত্যু নামক মহাসত্যকে আলিঙ্গন করেছেন । ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।

২০ জুলাই ২০২৫ রোববার সকাল ১০ টা ৭ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার স্ত্রী চিত্রশিল্পী আইভি জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

হামিদুজ্জামান খান শুধু ভাস্কর্যেই নয়, জলরঙ, তেলরঙ, অ্যাক্রিলিক ও স্কেচ মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তার ভাস্কর্যের মূল বিষয় ছিল পাখি। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার নির্মিত ব্রোঞ্জ ও ইস্পাতের পাখির ভাস্কর্য আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে।
গত ১৫ জুলাই শারীরিক জটিলতার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । ৭৯ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । তার স্ত্রী আইভি জামান গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, হামিদুজ্জামান খান আইসিইউতে ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত । তিনি আশা করেছিলেন, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আইভি জামান আরো জানান, হাসপাতাল থেকে মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নেওয়া হবে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সময় চূড়ান্ত হলে সবাইকে জানানো হবে।

হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট (বর্তমান চারুকলা অনুষদ ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতক পাস করেন। শুরুতে জলরঙের চিত্রকর্মে সুনাম অর্জন করলেও পরবর্তীতে ভাস্কর্যেই তার প্রতিভা বিকশিত হয় । ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা চারুকলায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে আটক করেছিল। ২৭ মার্চ নিউমার্কেট এলাকায় অসংখ্য মৃতদেহ দেখে তিনি গভীরভাবে আঘাত পান। যুদ্ধের ভয়াবহতা তাকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৭২ সালে ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে তিনি ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নির্মাণে অংশ নেন। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মারক ভাস্কর্য, যা জয়দেবপুর চৌরাস্তায় স্থাপিত হয়। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘জাগ্রত বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংশপ্তক’, ঢাকা সেনানিবাসের ‘বিজয় কেতন’, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের ‘ফ্রিডম’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’ এবং মাদারীপুরের ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। আশির দশকে বঙ্গভবনের প্রবেশপথে স্থাপিত ‘পাখি পরিবার’ ভাস্কর্য দিয়ে তিনি নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেন। গুলশানের ইউনাইটেড ভবনের সামনে ‘পাখি’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘শান্তির পাখি’ তার সৃজনশীলতার উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি জীবনে প্রায় দুইশত ভাস্কর্য তৈরি করেছেন । ৪৭টি একক প্রদর্শনীর আয়োজিত হয়েছে মহান এ শিল্পীর। শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ২০২২ সালে তিনি বাংলা একাডেমি ফেলো নির্বাচিত হন । স্বকালজয়ী এই গরীয়ান শিল্পীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের মিশকালো ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে- বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, জাতীয় সাংস্কৃতিক ধারা, পদক্ষেপ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সঙ্ঘ, সারগাম ললিতকলা একাডেমি, স্বপ্নকুঁড়ি সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।

Facebook
WhatsApp
Email
Telegram
LinkedIn
Twitter