Voice Chattogram

Voice Chattogram

কবি আল মাহমুদের সাহিত্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য করার দাবি জানিয়েছে বরিশালের লেখক সমাজ

কবি আল মাহমুদের সাহিত্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য করার দাবি জানিয়েছে বরিশালের লেখক সমাজ।

সোনালী কাবিনের কবি, সমকালীন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে জীবনানন্দের জনপদ বরিশালে। শেকড় সাহিত্য সংসদ আয়োজিত আল মাহমুদ জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলা সাহিত্যে সমকালীন কবিদের প্রধান কবি হচ্ছেন আল মাহমুদ। তিনি এদেশের মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে সাহিত্য রচনা করেছেন, তাঁর সাহিত্যকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। একই সাথে কবি আল মাহমুদের সাহিত্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাংলা বিভাগে পাঠ্যভুক্ত করে পড়াতে হবে। কবি আল মাহমুদ এর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তারা বলেন- “গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল কবুল” ; “আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে / হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে। ”
-এমন অসংখ্য হৃদয়পঙক্তির উদগাতা সমসাময়িক বাংলা কবিতার রাজপুত্র কবি আল মাহমুদ।
মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ যিনি ‘আল মাহমুদ’ নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্‌ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন প্রবাসী সরকারের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ (১৯৭২-১৯৭৪) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। বাংলা কবিতার অনন্য কণ্ঠস্বর কবি আল মাহমুদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবা মীর আবদুর রব। মা রওশন আরা মীর। স্ত্রী সৈয়দা নাদিরা বেগম। পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। কবিতা লিখে পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা, প্রভূত খ্যাতি ও সম্মাননা।
আধুনিক কবিতায় লোকজ উপাদান ছড়িয়ে দেওয়া কবি আল মাহমুদ পঞ্চাশের দশকের কবিতার অন্যতম প্রধান পুরুষ। তিরিশের আধুনিক কবিরা যখন পাশ্চাত্যের প্রভাবে নাগরিক, নৈর্ব্যক্তিক ও খানিক নিরাশাবাদিতার দ্বারা প্রভাবিত আল মাহমুদ তখন দেশজাত, মানবিকতা, সাম্যবাদ ও এতে লগ্ন থাকার আকুতি জানিয়েছিলেন কবিতায়। বাংলার পাঠক সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। আজ সেই কবির ৮৯ তম জন্মদিন । সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে মাহমুদ ঢাকা আগমন করেন। সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র/পত্রিকার মধ্যে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলা পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারত গমন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। যুদ্ধের পরে দৈনিক গণকণ্ঠ নামক পত্রিকায় প্রতিষ্ঠা-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সম্পাদক থাকাকালীন সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্প গ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক পদ থেকে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে। শারীরিকভাবে তিনি নেই কিন্তু বাংলা সাহিত্যে কবি আল মাহমুদের অবস্থান চিরস্থায়ী। কবিতায় আল মাহমুদ এমন এক স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেন- যা কালের সাক্ষী । শুধু কবিতা নয়, সমকালীন গল্প-গদ্যের অসাধারণ রূপকার আল মাহমুদ।
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শেকড় সাহিত্য সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে কবি আল মাহমুদ ও তার সাহিত্যকে চরম অবহেলা করা হয়েছে। কবির মৃত্যুর পর বাংলা একাডেমিতে তাঁর জানাজা পর্যন্ত পড়তে দেয়া হয়নি। যারা এ কাজ করেছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সম্প্রতি বরিশাল সদর রোডে দৈনিক বাংলাদেশ বাণী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শেকড় সাহিত্য সংসদের সহসভাপতি কবি আল হাফিজ। প্রধান অতিথি ছিলেন নব্বই দশকের খ্যাতিমান কবি নয়ন আহমেদ। মূখ্য আলোচক ছিলেন অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কবি মাহবুবুল হক।
কবি আল মাহমুদের বর্ণাঢ্য কর্মময় ও সাহিত্য জীবন নিয়ে আলোচনা করেন শেকড় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি ও গবেষক পথিক মোস্তফা, বরিশাল সংস্কৃতি কেন্দ্রের পরিচালক ও দৈনিক বাংলাদেশ বাণী সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীন, কবি খৈয়াম আজাদ, গবেষক ও কলামিস্ট মাহমুদ ইউসুফ, কবি সজীব তাওহীদ, কবি আহমেদ বেলাল, কবি সাইফুল্লাহ সাঈফ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি মৃম্ময় হাসান।

Facebook
WhatsApp
Email
Telegram
LinkedIn
Twitter