
বৈরী আবহাওয়া না থাকলে ঈদের টানা ছুটিতে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ঢল নামার প্রত্যাশা
পবিত্র ঈদুল আজহাকে (কোরবানির ঈদ) কেন্দ্র করে এবারই প্রথম টানা ১০ দিনের ছুটি পেতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। গতকাল ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত দশ দিনের টানা ছুটিতে যদি দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া না থাকে তা হলে দেশের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম হবে বলে প্রত্যাশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত কমে গেলে হ্রদ-পাহাড়ের জেলা রাঙ্গামাটির পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্টরাও প্রত্যাশা করছেন এবার ঈদকে কেন্দ্র করে জেলায় পর্যটকদের ঢল নামবে। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট-কটেজগুলোতেও নেওয়া হচ্ছে আগাম বুকিংও। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে তীব্র দাবদাহে শুকিয়ে যেতে শুরু করে বিশালাকার কাপ্তাই হ্রদের পানি। কিন্তু এবছর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে ভারি বর্ষণের ফলে বর্ষা মৌসুমের আগেই কাপ্তাই হ্রদের পানি ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ঝিরি-ঝর্ণাগুলোও। এতে করে অনুকূল আবহাওয়া ও হ্রদের পানি কিছুটা বাড়ার কারণে এখন হ্রদ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়ও। তবে কাপ্তাই হ্রদ ছাড়াও রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর মতোন অসংখ্য পর্যটন স্পট ও বিনোদনকেন্দ্রও রয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে অন্যতম রাঙ্গামাটি ডিসি বাংলো, পলওয়েল পার্ক, ঝুলন্ত সেতু, কেরাণী পাহাড়, পর্যটন আরণ্যক, রাঙাদ্বীপ, রাজবন বিহার, চাকমা রাজবাড়ি, গাঙ সাবারাং, বার্গী লেকভ্যালি, বেরাইন্না, বরগাঙ, রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট, আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক অন্যতম। এছাড়াও জেলার কাপ্তাই উপজেলার নিসর্গ পড হাউজ, লেকশোর, জুম রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়া উঠা এসব পর্যটনকেন্দ্র মুগ্ধ করবে ভ্রমণপিপাসুদের। বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝর্ণা, নিলাদ্রী রিসোর্ট ছাড়াও রয়েছে একাধিক ঝর্ণা। এছাড়া আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত মেঘ পাহাড়ের উপত্যকা-খ্যাত সাজেক ভ্যালি পর্যকেন্দ্রেও চলছে আগাম বুকিং।
সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুর্বণ দেববর্মণ জানান, টানা ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুুতি নেওয়া হয়েছে। সাজেকে ছোট-বড় মিলে মোট ৯৮টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে। সামনে যদি আবহাওয়ার পরিবেশ ভালো থাকে তাহলে আশা করছি, শতভাগ রিসোর্ট-কটেজ বুকিং হয়ে যাবে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, আগামী ৯-১৩ জুন পর্যন্ত আমাদের মোটেলে ৮০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং রয়েছে। আমরা আশা করছি, শতভাগ বুকিং হবে। পর্যটকদের মানসম্মত সেবা দেওয়ার জন্য মোটেলের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণে করা হয়েছে। যেহেতু সরকারি লম্বা ছুটি, তাই আশা করছি দেশের আবহাওয়া ভাল থাকলে আশানুরূপ পর্যটক এখানে আসবেন। আমরা পর্যটকদের রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় স্বাগতম জানাচ্ছি।
রাঙ্গামাটি জেলা হোটেল-মোটেল সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল সৈকতের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, আমাদের প্রত্যাশা বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে এবছর অন্যান্য বছরের চেয়ে পর্যটকের উপস্থিতি কিছুটা বাড়বে। কারণ এবার বৃষ্টিপাতের কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ বেড়েছে, ঝিরি-ঝর্ণাগুলোও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। অন্যদিকে অন্যান্য ঈদ মৌসুমের ৪-৬ দিনের ছুটি থাকলেও এবার ১০ দিনের টানা ছুটি। এটি পর্যটকদের আগমন ঘটার অন্যতম একটা বড় কারণ।
পর্যটন ট্যুরিস্ট বোট চালক সমিতির নেতা রজমান আলী বলেন, আশা করছি বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে ঈদের ছুটিতে বেশ ভালো পর্যটক সমাগম হবে এবং আমরা ভালো ব্যবসা করতে পারব। পর্যটকদের বরণ করে নিতে আমরা আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছি। কাপ্তাই হ্রদের প্রতিটি বোটে দূর্ঘটনা এড়াতে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। আর বোটে সবাই ফাইফ জ্যাকেট যাতে পড়ে তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জোড়ালো ভুমিকা থাকবে।
