Voice Chattogram

Voice Chattogram

রাঙ্গুনিয়া ইস্টার্ন কেমিক্যাল মিল ১০ কোটি টাকার সম্পদ ১.৯ কোটিতে বিক্রি

বিগত সরকারের আমলে চরম অনিয়ম দুর্নীতি ব্যবস্থাপনায় টেন্ডারে রাঙ্গুনিয়াস্থ ইস্টার্ন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ১০ কোটি রাস্ট্রীয় সম্পদ মাত্র ১.৯ কোটি টাকায় বিক্রিত মালামাল এখন সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানাগেছে,ইস্টার্ন কেমিক্যাল বিক্রির টেন্ডার আহ্বানে কোন নিয়মনীতির মানা হয়নি। খোজাখুজি করে কোন সুনিদিষ্ট কাগজপত্র শিল্প মন্ত্রনালয়ে পাওযা যায়নি। সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করা হয়েছে। গুটি কয়েক কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে কেন সস্তা দামে নিলামে বিক্রি করা হলো তাহা মন্ত্রনালয় পর্যন্ত জানেনা।
প্রতিদিন ৪/৫ ট্রাকযোগে দেদারসে পাচার হচ্ছে সস্তা দামে কেনা মিলের মূল্যবান যন্ত্র্রপাতি। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে টেন্ডার বাস্থবায়ন করা কাজটি এখন হাত বদল হয়ে দখলে নিয়েছে কিছু প্রভাবশালী টেন্ডারবাজ সুবিধা ভোগি বিএনপির নেতরা।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিশাল আকৃতির ট্যাংক, বয়লার, বৈদ্যাুতিক ট্র্যান্সপওয়ার, গ্যাসসিলিন্ডার, ভারি ভারি ইস্পাত-লোহার পাত সহ ফ্যাক্টরীর সকল বিভাগের মেশিনারি যন্ত্রপাতি বড় বড় ট্র্যাকে লোডিং আর আউটিংয়ের কাজ। মলের মুল গেইট কড়া প্রহড়ায় বন্ধ রেখে দিবা রাতি চলছে মালামার সড়িয়ে ফেলার মহাযজ্ঞ।

একাজের সাথে জড়িত স্থানীয় পৌর বিএনপি নেতা মো সেকান্দর জানায়, টেন্ডারটি আওয়ামীলীগ আমলের। শামসু, জালাল, রাশেদ, কায়ছার দখলে ছিল। গত ৫ আগষ্ট পালিয়ে যাবার পর কাজটা আমরা নিয়েছি। আমরা সবাই মিলে যৌথ ভাবে কাজটি করছি। কিন্তু টেন্ডারটি পেয়েছে চট্টগ্রাম সাগরিকাস্থ সজীব এন্টার প্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্টান। আমরা তার কাছ থেকে সরফভাটার ইসমাইলসহ ৫০% কাজ নিয়েছি। আমাদের সাথে বিএনপির শতাধিক কর্মী জড়িত আছে। আবার ৫০% কাজের মধ্যে থেকে বেতাগী ইউনিয়নে ১০%, পোমরাতে ১০%, নোয়াগাঁওতে ১০%, নিজে ১০% ও ইসমাইল ১০% করে আমাদের মধ্যে ভাগ হয়েছে। তবে ইসমাইল বিদেশে হলেও তার কর্মীরা যুক্ত আছেন দেখা শুনা করার।
সাইড এলাকায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিনিধি রুহুল আমীনের কাছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে বাওয়ালি গ্রুপের প্রতিষ্ঠিত মিলটি ১৯৭৮সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছিল। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার নোয়াগাঁও এলাকায় ১০দশমিক এক একর ভূমির উপর এই শিল্প প্রতিষ্টানের পাশে রয়েছে নিজস্ব আরও ১৫একর পাহাড়ি ভূমি। দেশের একমাত্র ফরমালিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্টান ছিল এই ইস্টার্ন কেমিক্যাল। এটি বিদেশ থেকে মিথানল আমদানি করে উন্নতমানের ফরমালিন উৎপাদন ইউনিট।
২০১৭ সালেও গড়ে মাসিক উৎপাদিত মালামাল বিক্রি করে এ মিল মাসিক ২২লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছিল। তাছাড়া চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বানিজ্যিক এলাকায় ইস্টার্ন কেমিক্যালের ১৯ ও ২৪ শতাংশের ২টি প্লট আছে। একটি ডেভেলপার কোম্পানীর মাধ্যমে ১৯ ও ২৯ তলা বানিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, কোম্পানি থেকে জামানত হিসেবে প্রাপ্ত ১৫ কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে। ব্যাংক থেকে সে টাকায় ৮ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পাচ্ছেন এই ট্রাস্ট।
এই মিলটি বন্ধ করতে ব্যাক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্টানের সঙ্গে যোগসাজস করে একটি সিন্ডিকেট চক্র। মিথানল আমদানি বন্ধ করে দেন চক্রটি। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে লোকসান শিল্প দেখাতে উচ্চ পর্যায়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ইন্ধনের কথা সরাসরি প্রকাশ্যে চলে আসে।
এ চক্রের মাধ্যমে কিছু দিন প্যারা ফরমালিন বাহির থেকে আমদানি করে ইউরিয়া ফর্মালডিহাইড এডহেসিভ, ইউরিয়া ফর্মালডিহাইভ কম্পাউন্ডে পাউডার ইউনিট ২টি চালু রাখে। এই শিল্প প্রতিষ্টানে এক সময় কমে খরচে ফরমালিন উৎপাদন করা হতো। কিন্তু এই সিন্ডিকেট চক্রের যোগসাজসে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিষ্টানটি লোকসান গুনতে শুরু করে। ২০১৬ তে যে পক্রিয়াটি শুরু হয় তাহা শেষ করা হয় ক্রমাগত লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জুন অবশেষে বন্ধ ঘোষনার মধ্যে দিয়ে। অন্য ৯টি প্রতিষ্টানের মতো সেবছর জুলাই মাসে দরপত্র আহ্বান করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে ইস্টার্ন কেমিক্যালের প্রধান ও উপ-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হারুন ২০১৮ সালের ২১জুন স্বাক্ষরিত এবং ৩০জুন মিল বন্ধের ঘোষনার পেক্ষিতে কার্যকর হলেও পরবর্তীতে নিলামের অর্ডারটি বাতিল হয়। কিন্তু সেই অসাধু কর্তাদের দৌড়ঝাপ বন্ধ হয়নি। ট্রাস্টের উচ্চ পর্যায়ের একটি সিন্ডিকেট সভা করে পুনরায় ২০১৮ সালের ৩০ জুনের রূপরেখায় হাটা শুরু করে। এবিষয়ে বহু তদবিরের পর সেই ফলাফলের লক্ষ্যে পৌছে যায় সিন্ডিকেট চক্রটি।

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সহযোগিতায় তার হোমরা চোমরা গুনধর নেতা ইঞ্জিনিয়ার শামসু-রাশেদ-কায়ছারদের হাত দিয়ে শুরু হয় টেন্ডার প্রক্রিয়া। যদিও চট্টগ্রাম সাগরিকাস্থ সজীব এন্টারপ্রাইজের ব্যানারে ৩১জুলাই ২০২৪ সে টেন্ডার পুনরায় করা হলেও কিন্তু ৫ আগষ্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের হোমরা চোমরারা পালিয়ে গেলে তা সহজে প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বাধীন সিণ্ডকেটের হাতে হাত বদল হয়েছে বলে জানাযায়।

এক সময়ে চাকুরি করা ইস্টার্ন কেমিক্যালের এক শ্রমিক এ প্রতিনিধিকে জানায়, এই মিলের টেন্ডার হাওয়া মালামালের পরিমান প্রায় ১০ কোটি টাকার উপরে। কেন বা কারা এত অল্প টাকায় কিনে নিল তা ভাবতে অবাক লাগে। মিলের ট্রান্সমিটার, ও ২টি গাড়ি রয়েছে যা সম্পূর্ণ নতুন, রয়েছে আড়াই কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, মিলের ১০ একর জমি ছাড়াও আরো রয়েছে মিলের ১৫ একর পাহাড় ভূমি। মিলের যন্ত্রপাতি ও কাচাঁমাল বিক্রি না করে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে মিলটি চালু করা হলে যেমনি মানুষের কর্মসংস্থান হতো তেমনি সরকারের লা়ভজনক শিল্প প্রতিষ্টান হিসেবে পুনরায় উজ্জীবিত হতো বেশি। এই মিল বন্ধের কারনে আজ ৪জন কর্মকর্তা, ২৪জন কর্মচারী ১২জন শ্রমিক ও ৫০জন অস্থায়ী শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় শতাধিক পরিবারের শান্তি চিরদিনের জন্য ফুড়িয়ে গেল।

Weather Data Source: Wettervorhersage 14 tage

আরো পড়ুন