
মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য এই গানের বৈশিষ্ট্য এবং বাস্তবতা বর্তমান সময়ে এসে যেন হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। সমাজ, দেশ এবং মানুষের চলমান সভ্যতার ধারায় বিভিন্ন সময়ে এবং প্রয়োজনে মানুষ একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে জীবন যাপন করে আসছে। চলতে চলতে মানুষে মানুষে গভীর থেকে গভীরতর সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। এভাবেই চলতে থাকে জনজীবন। কিন্তু সভ্যতার এই চলমান রীতির ভিতরে মাঝে মাঝে কিছু খারাপ মানুষের কর্মকাণ্ড ভালো মানুষকে প্রচুর ভোগান্তি দেয়। যা ভালো মানুষেরা বয়ে বেড়ায় আজীবন।
এমনই একটা ঘটনা ঘটেছে রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে। মোঃ শাহিন নামক একজন দূরদেশী (বাংলাদেশের খুলনার) লোক হঠাৎ ওই গ্রামে ঝালমুড়ি বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে পরিবারসহ বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করতে থাকে। সেই সাথে ইসলামপুর গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে দারুণ শখ্যতা গড়ে ওঠে। ওই যে মানুষে মানুষে চলতে চলতে সম্পর্ক তৈরী হওয়া। সেই তৈরী হওয়া সম্পর্ক দিয়েই প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহিন। এলাকার বেশ কয়েকজন মানুষের মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে রাতের আঁধারেই স্ব পরিবারে উধাও হয়ে যায় একদিন।

প্রতিবেশীরা প্রতিদিনের ন্যায় ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহিনের বাড়িতে গিয়ে দেখে দরজার সামনে চারজোড়া জুতা রাখা আছে। প্রতিবেশীরা বাহির থেকে ডাক দিলে বাসার ভিতর থেকে কেউই সাড়া দিচ্ছে না দেখে তারা ভিতরে ঢুকে দেখে বাসায় কেউই নেই। সবাই তো অবাক! পরে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায় প্রতারক ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহিন পরিবার নিয়ে রাতের আঁধারেই পালিয়ে যায়।
আর এদিকে শাহিনকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দেয়া দুইটি অসহায় পরিবারের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। দিনমজুর মোঃ আরাফাতের মাধ্যমে দশ হাজার টাকা, মোঃ জোয়াদ আলির মাধ্যমে ত্রিশ হাজার টাকা, মুদি দোকান, গ্যাসের দোকানসহ বিভিন্নজনের নিকট থেকে নগদ টাকা ধার নিয়ে পালিয়ে যায় এই ঝালমুড়ি বিক্রেতা প্রতারক শাহিন। ঋণ নিয়ে দেয়া দিনমজুর আরাফাত এবং জোয়াদ আলির সাথে টাকা তুলে দেওয়ার বিষয় আলাপ হলে তারা জানায়, আমরা সরলমনে বিশ্বাস করে তাকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দিয়েছি। সে আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাদেরকে বিপদে ফেলে পালিয়ে যায়। তার মোবাইল নাম্বার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায় না এবং শাহিনও আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না। এখন থেকে মানুষকে সহযোগিতা করার প্রতি কোন আগ্রহই আমাদের থাকবে না। অপরিচিত হলে তো কথাই নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য এমদাদুল হক মিলন বলেন, ঘটনাটা আমি শুনেছি। এটা শুনে আমার অনেক খারাপ লেগেছে। অসহায় মানুষগুলোকে প্রতারক শাহিন কষ্টে ফলে গেছে। এই ধরনের মানুষের কারণে বর্তমানে আমাদের সমাজ ও দেশ কলুষিত হচ্ছে। মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে।
এহেন পরিস্থিতিতে এই গুটিকয়েক খারাপ মানুষের কারণে ভালো মানুষদের প্রতিও দিনদিন আস্থা উঠে যাচ্ছে বর্তমান সমাজে। তাই সব পেশায়, সব পরিস্থিতিতে বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ হলো ভালো মানুষ হওয়া।
