পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর চিকিৎসার ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসার স্থল হচ্ছে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিনিয়ত এসব এলাকার সাধারণ মানুষগুলো স্বাস্থ্য সেবা পেতে ভীড় জমায় লংগদুর হাসপাতালে। কিন্তু হাজারো আশা এবং জীবন বাঁচানোর স্বপ্ন নিয়ে যখন হাসপাতাল আসে তখনি ঘটে বিপত্তি।
হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল দশটায় হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেশী এবং একজন চিকিৎসক দ্বারাই চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। বাকি চিকিৎসক কোথায় জানতে চাইলে, হাসপাতালের টিএইচও ডাক্তার শাহিন বলেন, ডাক্তাররা লংগদুর মত জায়গায় এসে কি বসে থাকবে। তাদের এখানে কি ফেসিলিটি আছে। প্রশ্ন করা হয়, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার প্রায় নেশা করে বা বিভিন্ন অন্যায় করে। তিনি উত্তরে বলেন, নেশা করা এটা পাহাড়ীদের অভ্যাস। এটা আসলে বলার কিছু নাই। তাহলে কি তিনি পাহাড়ীদের ছোট করেছেন? নাকি ড্রাইভারকে নেশা করে গাড়ি চালাতে সহযোগীতা করছেন এসব বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী জাহাঙ্গীর নামের ভদ্রলোক তিন মাসের একজন ছোট শিশুকে ইনজেকশন দিচ্ছে। এই ধরণের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলে। এবিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের টিএইচও ডাক্তার শাহিন বলেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই কাজের সাথে জড়িত তাই এসব কাজে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে অফিসিয়ালি এই ধরণের নিয়ম নাই।
রবিবার সকালে লংগদু হাসপাতালের টিএইচও ডাক্তার শাহিনকে ইমারজেন্সি একজন গর্ভবতী বোনের জন্য জরুরি অ্যাম্বুলেন্স এর প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পরও তিনি ফোন রিসিভি করেনি। একই সময় হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার মামুনকে ফোন করলে তিনি ও কল ধরেনি। পরবর্তীতে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের ডাক্তার বিধানকে ফোন করলে তিনি জরুরি বিভাগে এসে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু জরুরি বিভাগে এসে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত স্পিড বোট ভাড়া করে রাঙ্গামাটিতে পাঠানো হয়।
এসব বিষয় ডাক্তার শাহিনকে অফিসে না পেয়ে মোবাইল ফোনে আবারো সকাল দশটার দিকে ফোন করে উপরোক্ত বিষয়গুলো বলা শুরু করলে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, কাহিনী না করে কি বলতে চাচ্ছেন এই বিষয়ে বলেন। পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয় বিস্তারিত বল্লে তিনি বলেন, আপনাকে যখন জরুরি বিভাগে আসতে বলছে, আপনি এসে অপেক্ষা করতেন। তখন প্রতিনিধি রোগীর অবস্থার কথা জানালে। তিনি বলেন, জরুরি বিভাগে ডাক্তার সারাক্ষণ বসে থাকবেনা সে বাহিরে বা বাড়িতেও থাকতে পারে।
এছাড়াও, মাইনী ইউনিয়নের গাঁথাছড়া গ্রামের নুর শাহিদ ও নুর কবির তারা অভিযোগ করে বলেন, গত সপ্তাহে আমার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা রাবেতা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে লংগদু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে কল দিলে তিনি বলেন গাড়িতে তেল নাই। কিন্তু মাকে বাঁচাতে আমরা তেল দিবো বল্লেও সে আসবে, আসতেছে বলে আমাদের সময় নষ্ট করেছে। পরবর্তীতে আমার মা এখানেই মারা গেছে। আমরা তীব্র নিন্দা ও যথাযথ বিচার চাই।
এসব বিষয়ে ডাক্তার শাহিনকে বল্লেও তিনি তেমন কোন পাত্তা দেয়নি। এর আগেও হাসপাতালের একজন স্টাফের বিরুদ্ধে দরজা জানালার বিক্রি অভিযোগ উঠলে তিনি নয় ছয় দিয়ে সমাধান করেন। সব শেষে যখন প্রতিনিধি তাকে বলেন, আপনার বলা কথাগুলো রেকর্ড হয়েছে নিউজে আমি এভাবেই ধরবো, আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। তখন তিনি বলেন, এর আগেও আপনি নিউজ করেছেন, নিউজ করেন।
লংগদুরের স্থানীয় সচেতন মানুষ বলছেন, হাসপাতালে গেলে কোন রকম সহযোগীতা পায়না ভুক্তভোগীরা। ডাক্তার কোন রকম দেখে বাহির থেকে ওষুধ ক্রয় করতে বলে। কোন রকম ভালো পরীক্ষা তারা করেনা। তারা বলছেন প্রায় ২৮/২৯ বছর যাবত এক্সের করার জন্য কর্মচারী রয়েছে, মেশিনও আছে দুটির কোনটির কোন কাজ হাসপাতালে নাই। কিন্তু এক্সের কর্মচারী ঠিকই সরকারী বেতন ভাতা খেয়ে যাচ্ছেন। লংগদুর সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রভাবশালী ও দায়িত্বহীন কর্তৃপক্ষর অপসারণ চায় তারা।
এবিষয়ে রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন নুয়েন খীসা বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। যেহেতু বিষয়টি আপনি আমাকে অবগত করেছেন খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।